Some/Everyday Habits That Contribute to Weight Gain: Part 2 ওজন বাড়ার জন্য দায়ী কিছু
প্রিয় পাঠক, সালাম ও শুভেচ্ছা| সবাই কেমন আছেন?
আগের পোস্ট ওজন বাড়ার জন্য দায়ী কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস: পর্ব-১ কেমন লেগেছে? আমার টিপসগুলো আপনাদের কেমন লাগছে?
আমি নিশ্চিত এই টিপসগুলো মেনে চললে, আপনি আপনার অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলে, জীবনে অনেক ফিট থাকতে পারবেন|তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই টিপসগুলো সবার সাথে শেয়ার করুন|
এই পর্বে আরো কিছু ওজন বাড়ার জন্য দায়ী অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও তার প্রতিকার দিচ্ছি:
- সবসময় সাদা শর্করা খাওয়া, লাল শর্করা একেবারেই না খাওয়া: আমরা সাধারনত: সাদা শর্করা দিয়ে তৈরী খাবার,যেমন: সাদা আটা, সাদা চাল, ইত্যাদি খেয়ে থাকি|এগুলো প্রক্রিয়াজাত খাবার, তাই এতে আঁশ কম, পুষ্টি কম|দ্রুত হজম হয়ে, ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে| লালা চাল, লাল আটা প্রক্রিয়াজাত খাবার নয় —এগুলোতে খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় থাকে, অনেক আঁশ থাকে| ফলে খাবার হজমে সাহায্য হয় ও শরীর সঠিক পুষ্টি পায়|তাছাড়া এগুলো হজম হতে সময় নেয় বলে, পেটে অনেকক্ষণ থাকে ও ক্ষুধা দ্রুত লাগে না, রক্তের ইনসুলিনের মাত্রাও ঠিক রাখে|দিনের ৫০% শর্করা সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য হলে ভালো|
- চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার খাওয়া: আজকাল চিনিযুক্ত কোমল পানীয়গুলো খুব জনপ্রিয়, এমনকি শিশুদের কাছেও|মনে রাখবেন-আমাদের শরীরে চিনির কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ: চিনি একটি প্রক্রিয়াজাত খাবার, যাতে কোনো পুষ্টি উপাদান নেই|এটি শর্করা ও ক্যালরি বহুল খাবার, যা অধিক পরিমানে গ্রহণ করলে, শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমে ওজন বাড়ায়| চিনি শরীরের ইনসুলিন বাড়িয়ে খাদ্য খাবার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে, ফলাফল: বেশি খাবার খাওয়া, বেশি ওজন| একই কথা এনার্জি ড্রিংক, বোতলজাত ফলের জুস, রেস্টুরেন্টের পানীয়গুলোর জন্য প্রযোজ্য|কোমল পানীয় কেন পান করবেন না তা জানুন|
- দিনের খাবারগুলো সঠিক সময়ে না খাওয়া: সারাদিনের খাবারগুলো কখন ও কিভাবে খাবেন, তা জানা অনেক দরকার| সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি প্রাত:রাশ সারলে, দিনটা সুন্দর ভাবে শুরু হয়| অন্যান্য বেলার খাবারগুলোও তাড়াতাড়ি বা সময় মতো সারতে হবে|রাতের খাবার ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে খেলে, হজম ঠিক মতো হবে, ওজন ঠিক থাকবে|রাত ৮ টার পরে আর কোনো ভারি খাবার না খাওয়াই ভালো|
- পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া: সারাদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার খেলে, তা ওজন কমাতে, বাড়াতে, ঠিক রাখতে সাহায্য করে| অনেকেই দেখা যায় কেবল একরকমের খাবার: যেমন: শর্করা খেয়ে ফেললেন, ভাত বেশি খেলেন অনেক মাংশ দিয়ে|সবজি খেলেনই না, কিংবা শুধু ডাল ভাত খেলেন|আবার অনেকেই তিন বেলা ভাত খেলেন, তো অন্যবেলা কোনো ফলমূল, বাদাম ইত্যাদি স্ন্যাক্স হিসাবে খেলেন না|
- রেস্টুরেন্টে কি ভাবে খাবার খেতে হয় তা না জানা: আমরা অনেকেই
রেস্টুরেন্টে খাবার খাই, কিন্তু মজার খাবার দেখে ঝাপিয়ে পড়ে স্বাস্থ্যের
কথা ভুলে যাই|মনে রাখবেন, বেশি খাওয়া মানে বেশি ওজন| তাই রেস্টুরেন্টে খেতে
যা জানতে ও মানতে হবে:
- একবারে অনেক খাবার অর্ডার দেয়া যাবে না, অল্প খাবার অর্ডার করে, অল্প বা পরিমিত পরিমানে খেয়ে, বাকিটা বাসায় নিয়ে আসতে হবে|যেমন: একটি বড় বার্গার দুই জন মিলে খাওয়া যেতে পারে, বা অর্ধেক খেয়ে বাকিটা বাসায় নিয়ে আশা যেতে পারে|এতে টাকাও বাচবে|
- বুফে খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে: বুফে খাবার মানে কয় দিনের খাবার একবারে খাওয়া একটু ভাবুন তো?এত খাবার একবারে খেলে ওজন বাড়তে বাধ্য| বুফে খেতে গেলেও, বুফে টেবিলের দূরে বসুন|স্বাভাবিক ভাবেই আপনি বারে বারে উঠে খাবার নিতে চাইবেন না বা কম বার উঠে খাবার নিতে চাইবেন|
- কম ক্যালরি যুক্ত খাবার, যেমন: সালাদ, স্যুপ, চিনিছাড়া পানীয়,ইত্যাদি খাবারের অর্ডার দিতে হবে| মাংশ না খেয়ে বরং মাছ খাবার চেষ্টা করুন|ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে গ্রিল্ড, বেকড খাবারের অর্ডার দিন|
- রাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ও সময় মতো না ঘুমানো: অনেকেই ডায়েট করেন, ব্যায়াম করেন, কিন্তু সঠিক সময়ে ও পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমের অভাবে ওজন কমাতে পারেন না, বা সঠিক ওজনে আসতে পারেন না| যারা দৈনিক ৭ ঘন্টার কম ঘুমান, তাদের ওজন বাড়ার প্রবণতা বেশি|
কারণ হচ্ছে দুটি হরমোন: leptin(ক্ষুধা
কমানোর হরমোন ) ও ghrelin(ক্ষুধা বাড়ানোর হরমোন)| ঘুম ঠিক মতো না হলে
leptin কমে ও ghrelin বাড়ে| উচ্চ মাত্রার ghrelin ক্ষুধা বাড়ায়, আর নিম্ন
মাত্রার leptin খাবার খাওয়ার পরেও তৃপ্তি বোধ করতে দেয় না, আরো ক্ষুধা
লাগে ও খেতে ইচ্ছা করে, ফলে ওজন বাড়ে|তাই রাতের ঘুম তাড়াতাড়ি শুরু করা ও
ভালো হওয়া খুব জরুরি|রাত জাগার অভ্যাসও খুব খারাপ|হেলদি জীবনযাপন, কি জানাও দরকার |
- আপনি যখন ডায়েটে থাকছেন, তখন কি খাচ্ছেন তা লিখে না রাখা : আপনি যদি ডায়েট করেন, তাহলে অনেক সময় এমন হতে পারে যে আপনার সঠিক ওজনে আসতে পারছেন না, তখন সারাদিন কখন কি খাচ্ছেন তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন|কোন বেলা কোন খাবার থেকে কত ক্যালরি পাচ্ছেন, মোট কত ক্যালরি খাচ্ছেন তা নজর দিন|কোনো দিন বেশি খেলে তা কিভাবে পুষিয়ে নিচ্ছেন, তা লক্ষ্য রাখুন|আপনি কিভাবে আপনার শরীরের আদর্শ ওজন অর্জন করবেন তা জানুন|
- নিয়মিত ওজন না মাপা: যার নিয়মিত ওজন মাপেন না, তাদের চাইতে যারা নিয়মিত ওজন মাপেন, তারা ওজনের ব্যাপারে বেশি সচেতন| নিয়মিত ওজন মাপা আপনার নিয়মিত ওজন ঠিক রাখা বা কমাতে সাহায্য করে|সব সময় দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওজন মাপা সঠিক নিয়ম, না হলে ওজনের তারতম্য হতে পারে|সপ্তাহে একদিন ওজন মাপা হচ্ছে সঠিক উপায়|
- অতিরিক্ত টিভি দেখা বা অনেকক্ষণ বসে কোনো কাজ করা: অনেক সময় ধরে টিভি দেখা শরীরের জন্যে খুবই খারাপ, কারণ আমাদের শরীরকে কর্মক্ষম রাখার জন্যে তৈরী করা হয়েছে| গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে, যারা দিনে ৪ ঘন্টার বেশি এক নাগাড়ে বসে টিভি দেখেন, তাদের মোটা হবার প্রবণতা, যারা এক ঘন্টা দেখেন, তাদের চাইতে বেশি| এক নাগাড়ে অনেক সময় বসে কাজ করা, যেমন: কম্পিউটারে কাজ করাও মোটা হবার কারণ|অনেকে টিভির সামনে বসে থেকে বেশি খান, বা ক্ষুধা না লাগলেও খান, এটাও আরেকটি কারণ| কারণ ওই সময়ে আপনি কোনো নড়াচড়া করেন না, একেবারেই অনড়, শরীর কোনো ক্যালরি বার্ন করে না বললেই চলে, ফলে শরীর নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, ফলে হার্ট রেট, ব্লাড প্রেসার, মেটাবলিক রেট কমে, যা বেশি সময় থাকলে ওজন বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়| তাই বেশি সময় বসে না থেকে কাজ করতে হবে, যেমন: ঘরের কাজ করা,নিজের দৈনন্দিন কাজ করা, যেমন: কাপড় ধোয়া, কাপড় গুছানো, টেবিল গুছানো ইত্যাদি| অফিসে বেশি সময় বসে না থেকে, মাঝে মাঝে একটু হাটাহাটি করা যেতে পারে, বা অফিসের ব্যায়াম করা যেতে পারে|অফিসে কাজ করতে করতে বা টিভি দেখতে দেখতে কখনই খাবার খাবেন না, খাবার খাবেন খুব মনোযোগ দিয়ে এবং সে সময় কিছুই করবেন না|
- আবেগের বশে বা জীবনে কাজের/পরীক্ষার চাপে থেকে বেশি খাবার খাওয়া: জীবনে অনেক কঠিন সময় আসে|মানুষ আবেগী হয়ে বা অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত হয়ে বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখায়| তখন যদি নিজেকে সংযত করা না যায়, ফলাফল হয় বেশি খেয়ে ওজন বাড়া| যেমন: পরীক্ষার সময় অনেক ছাত্রের ওজন বাড়ে রাত জেগে পড়ে ও রাতের বেলা বেশি খাবার খেয়ে|অনেকে বিষন্নতা, উদ্বেগ, মানসিক চাপের কারণে ক্ষুধা না লাগলেও বেশি খেয়ে খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন|এ থেকে পরিত্রানের উপায় নিজেকে সংযত করা ও ওজন সম্পর্কে সচেতন হওয়া|
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা: ব্যায়াম? সময় কোথায়?সারাদিন এত কাজ করে ব্যায়াম করা সম্ভব নয়| এই হলো আজকাল আমাদের ব্যায়াম সম্পর্কে মনোভাব| সারাদিন কাজ করে শরীর ক্লান্ত লাগবেই|কিন্তু নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস না করলে শারীরিক ফিটনেস কখনই বজায় থাকবে না|নিজের শরীরের যত্নে ব্যয়ামের ভূমিকা অপরিসীম| ব্যায়াম সবার জন্যই খুবই দরকার| ব্যায়ামের অনেক উপকারিতা আছে| তাই ব্যায়াম করার সময় বের করা আপনার দায়িত্ব|এর জন্য দরকার সচেতনতা, তত্পরতা ইত্যাদি|ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি শারীরিক, মানসিক ফিটনেস তো পাবেনই, ক্যালরি বার্ন করে, ওজন নিয়ন্ত্রনে রেখে, হাঁড়,মাসেল,শক্তিশালী করে, বয়স কমিয়ে, স্মার্ট হয়ে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবেন|দিনে আর কিছু না–শুধু ৩০ মিনিট হাটলেও আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে|হাঁটার নিয়ম জানুন|